কর্মফল
ঈশ্বরের কাছে নিত্য কতই না কিছু চেয়েছি,
তিনি আমার থেকে নিয়েছেন মুখ ফিরিয়ে,
দেননি কিছুই আমার সকল চাওয়ার বিনিময়ে।।
প্রভু আমার-প্রিয় আমার-আমার জীবন স্বামী;
নিত্য একান্তে বসি তোমায় ডেকেছি কত আমি।
বিল্ব পত্র, পুষ্পাদি দিয়ে করেছি তোমার বন্দনা,
তবু আমার প্রতি হওনি তুমি তুষ্ট !
কতই না হয়েছে অভিমান আমার তোমা পরে ,
হয়েছি আমি অন্তরে-অন্তরে রুষ্ট ।
তোমার সৃষ্ট জগতের গোলক ধাঁধায় ঘুরে ঘুরে
ক্লান্তি যখন এসেছে নেমে,
হয়েছে মনে, এই বুঝি সব কিছু চিরতরে যাবে থেমে;
এবার চিরতরে হবে আমার ছুটি !
তখন-যখন আমার অবসন্ন-ক্লান্ত চোখে
নেমে এসেছে করাল ঘুমের গভীর ছায়া ,
তুমি এসে বসলে আমার শিওর পাশে ;
তোমার শীতল-স্নিগ্ধ পরশ দিয়ে দেখালে কত স্বপ্ন !
স্নেহভরা সুরে কইলে 'ওঠো – জাগো,
তোমার লক্ষ্যে পৌঁছুনোর কাজ তো হয়নি শেষ,
হয়নি তোমার সকল কর্ম সারা '।
আমি অবাক হয়ে বললেম –
‘'কী আমার কর্ম প্রভু - যা হয়নি আজও সারা ?
আমি তো তোমার এই জগৎ গোলক ধাঁধায় –
দিশাহীন এক জীব মাত্র !
আমাকে তো নেই কারো কোন প্রয়োজন –
আমি এক অভাজন ;
তবে কী মোর কর্ম প্রভু – যা হয়নি আজও সারা ?
তুমি কি দিয়েছো আমায় কোন কর্মভার !
তোমার কাছে যা চেয়েছি - সবই তোমার জানা ,
তার দাওনি তো কিছুই ;
আমার দেওয়ার আছে কিবা আর ?
এবার আমায় প্রভু দাও গো ছুটি,
ক্ষমা করে মোর সকল ত্রুটি ;
এই মোর নিবেদন।
গম্ভীর – শান্ত স্বরে তিনি বললেন –
“ ছুটি ? ছুটি কোথায় পাবে ?
সারা ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছি আমি ।
জীব – জড় – অনু – পরমাণু – গ্রহ – নক্ষত্র
সবই আমার নির্ভুল সৃষ্টি ;
প্রতিনিয়ত সর্বদিকে রয়েছে আমার দৃষ্টি ।
কর্মভার দিয়েছি সকল জনে ,
নিজ নিজ কর্ম করো আপন মনে ।
সুকর্ম – কুকর্ম সব কিছুই রেখেছি –
সকল জনের সম্মুখে ।
কর্মের ফল রেখেছি সবার অলক্ষ্যে ;
যেমন কর্ম করবে যে জন –
আমার সূক্ষ্ম বিচারে ফলও পাবে তেমন ।
ইহ জন্মের কর্ম সাঙ্গ হলে –
মরণের পথ ধরে তোমার হবে জন্মান্তর ;
এক রূপ হতে সবার হবে রূপান্তর ।
এটাই আমার খেলা – চলছে – চলবে ,
অনন্ত কাল ধরে – যুগ যুগান্তর”।।
আমি বলি – “ হে প্রভু –
তোমার সৃষ্ট কর্মের গোলক ধাঁধায় –
যেন পথ হারিয়ে না যাই কভু !
তোমার দেওয়া কর্মভার যেন বহিতে পারি –
সদা সত্যের পথ ধরে ;
ক্লান্তিহীন – হাসি মুখে যুগ-যুগান্তর ধরে,
তোমারই জয়ধ্বনি করে ।
কর্মই আমি করে যাব - বুকে নিয়ে বল ,
তোমারই আশীর্বাদ শুধু করে সম্বল ;
তোমার কাছেই থাকবে জমা
আমার সকল কর্মফল” ।।
লেখক : শ্রী শান্তি নাথ ঘোষ